করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক্ব ইবনে আব্দুল মুহসিন আল-বদর হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,

“(আমার এই লেখা) বর্তমান সময়ে মানুষ করোনা ভাইরাস নিয়ে যে ভয় ও আতংকের মাঝে বসবাস করছে সে সম্পর্কে কিছু উপকারী উপদেশ। আমি মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে ও মুসলিম ভাই ও বোন যে যেখানেই থাকুক না কেনো, তাদের সবার উপর থেকে সমস্ত বালা-মুসীবত ও ফিতনা-ফাসাদ দূর করে দেন। তিনি আমাদেরকে সেইভাবে হেফাজত করুন, যেইভাবে তিনি তাঁর নেককার বান্দাদেরকে হেফাজত করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন একমাত্র তোওফিকদাতা এবং সমস্ত কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী।

(১) বালা-মুসীবত আসার পূর্বেই যেই দুয়া পড়তে হয়ঃ

উষমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যেই ব্যক্তি (সন্ধ্যাবেলায় নীচের এই দুয়া) তিনবার বলবে সকাল হওয়া পর্যন্ত তার উপর হঠাৎ কোন বিপদ-আপদ আসবেনা।” [আবু দাউদঃ ৫০৮৮, তিরমিযীঃ ৩৩৮৮, ইবনে মাজাহঃ ৩৮৬৯, হাদীসটি সহীহ।]

بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদুররু মা আ’সমিহী শাই’উং ফিল আরদ্বি, ওয়ালা ফিস-সামা-য়ী, ওয়াহুয়াস সামীউ’ল আ’লীম। (তিন বার)।

অর্থঃ আমি সেই আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারেনা। প্রকৃতপক্ষে তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।

সুতরাং হঠাৎ কোন বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য এই দুয়াটি প্রতিদিন সকাল বেলা তিনবার ও সন্ধ্যা সময় তিনবার করে পড়তে হবে।

(২) দুয়া ইউনুস বেশি বেশি করে পড়াঃ

দুনিয় ও আখিরাতে সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে বাঁচার জন্য সবচাইতে উত্তম একটি আমল হচ্ছে দুয়া ইউনুস বেশি বেশি করে পড়া। আর তা হচ্ছে –

لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লা-আংতা সুবহা’-নাক, ইন্নি কুংতু মিনায-যোয়ালিমিন।
অর্থঃ (হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত। [সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৮৭]

মহান আল্লাহ বলেন, “স্মরণ কর যুন-নুন (ইউনুস) এর কথা, যখন সে গোস্বাভরে চলে গিয়েছিল, আর ভেবেছিল যে তার উপর আমার কোন ক্ষমতা খাটবে না। অতঃপর সে (সমুদ্রের) গভীর অন্ধকার থেকে ডেকেছিল যে, “(হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।” আমি তখন তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম, আর দুঃশ্চিন্তা থেকে তাকে মুক্ত করেছিলাম। মুমিনদেরকে আমি এভাবেই উদ্ধার করি।” [সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৮৭-৮৮।]

আল-হাফিজ ইবনে কাষীর রহি’মাহুল্লাহ মহান আল্লাহর বাণী “মুমিনদেরকে আমি এভাবেই উদ্ধার করি।” - এর তাফসীরে বলেন, “বিশেষ করে যখন কোন মুমিন বালা-মুসীবতে পড়ে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকভাবে দুয়া করে তখন তিনি তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।”

অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীস বর্ণনা করেছেন, “কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি এই দুয়া ইউনুসের সাহায্যে আল্লাহর নিকট কিছু চাইবে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।” অন্য হাদীস অনুযায়ী, “এই দুয়া পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।” [সুনানে আত-তিরমিযীঃ ৩৫০৫, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

আল্লামাহ ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহি’মাহুল্লাহ তার ফাওয়ায়েদ নামক কিতাবে বলেন, “তাওহীদ ছাড়া অন্য কোন কিছুর বিনিময়ে কারো জীবনে এতো বেশি বিপদ-আপদ দূর হয়না। সেইজন্য বিপদ আপদের সময় যেই দুয়া পড়তে হয় তা হচ্ছে কালেমা তাওহীদ এবং দুয়া ইউনুস, বিপদে পড়ে যে ব্যক্তি এই দুয়া পড়ে, আল্লাহ তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। পক্ষান্তরে শিরকের মতো অন্য কোন পাপ কারো জীবনে এতো বড় বিপদ ডেকে আনেনা। তাওহীদের মাধ্যমে বান্দা তার রব্বের কাছে খুঁজে পায় আশ্রয়স্থল, মুক্তির পথ এবং সুরক্ষিত দুর্গ।”

(৩) বালা-মুসীবতে পড়ে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করাঃ

আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইতেন। [সহীহ বুখারীঃ ৬৬১৬, সহীহ মুসলিমঃ ২৭০৭।]

মুনাজাতের সময় আরবী কিংবা বাংলাতে এইভাবে দুয়া করা যায়ঃ

اللهمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযু বিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ-শাক্বা-ই, ওয়া সূ-ঈল ক্বাদ্বা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ’দা-ই।

অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট কঠিন অবস্থা, চরম দুর্ভাগ্য, খারাপ তাক্বদীর এবং দুশমনের হাসি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সহীহ বুখারী।]

(৪) ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময় সর্বদা এই দুয়া পড়াঃ

আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময় যদি কোন ব্যক্তি এই দুয়া পড়েঃ

«بِسْمِ اللَّهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، وَلَاَ حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ»

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহ, তাওয়্যাককালতু আ’লাল্লা-হি ওয়ালা হা’ওয়া ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থঃ আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎ কাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।

তাহলে তাকে বলা হয়, “তুমি হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছো, (অনিষ্ট হতে) রক্ষা পেয়েছো এবং নিরাপত্তা অবলম্বন করেছো।”

শয়তান তখন তার থেকে দূরে সরে যায় আর অন্য এক শয়তান বলে “তুমি ঐ ব্যক্তিকে কি করতে পারবে যাকে পথ দেখানো হয়েছে, নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে এবং হেফাজত করা হয়েছে?” [আবু দাউদঃ ৫০৯৫, হাদীসটি সহীহ। সহীহ আত-তিরমিযীঃ ৩/১৫১, আল-কালিমুত তাইয়্যিবঃ ৫৮/৪৯।]

(৫) সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর কাছে কল্যাণের জন্য দুয়া করাঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালে ও সন্ধ্যায় এই দুয়া করা কখনো ত্যাগ করতেন নাঃ

اللّهُـمَّ إِنِّـي أسْـأَلُـكَ العَـفْوَ وَالعـافِـيةَ في الدُّنْـيا وَالآخِـرَة
اللّهُـمَّ إِنِّـي أسْـأَلُـكَ العَـفْوَ وَالعـافِـيةَ في ديني وَدُنْـيايَ وَأهْـلي وَمالـي
اللّهُـمَّ اسْتُـرْ عـوْراتي وَآمِـنْ رَوْعاتـي
اللّهُـمَّ احْفَظْـني مِن بَـينِ يَدَيَّ وَمِن خَلْفـي وَعَن يَمـيني وَعَن شِمـالي، وَمِن فَوْقـي
وَأَعـوذُ بِعَظَمَـتِكَ أَن أُغْـتالَ مِن تَحْتـي

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন ও দুনিয়ার, আমার পরিবার পরিজনের ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! তুমি আমার গোপন দোষ-ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখ, আমার চিন্তা-উদ্বিগ্নতাকে শান্তি ও নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেফাযত কর আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর তোমার মহত্ত্বের উসীলা দিয়ে তোমার কাছে আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে, অর্থাৎ মাটি ধ্বসে আকস্মিক মৃত্যু হতে। [আবু দাউদঃ ৫০৭৪, সহীহ ইবনে মাজাহঃ ২/৩৩২।]

(৬) শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অধিক পরিমাণে দুয়া করাঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যার জন্য দুয়ার দরজা খুলে দেওয়া হল, মূলত তার জন্য রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হল। আল্লাহ তাআ’লার নিকট যা কিছু কামনা করা হয় তার মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করা তার নিকট বেশি প্রিয়।” [সুনান আত-তিরমিজীঃ ৩৫৪৮, যঈফ, মিশকাতঃ ২২৩৯, তা’লীকুর রাগীবঃ ২/২৭২।]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যে বিপদ-আপদ চলে এসেছে কিংবা যা (এখনও) আসেনি, এই দুই অবস্থাতেই দুয়ার দ্বারা (বান্দার) কল্যাণ লাভ হয়। সুতরাং, হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা দুয়াকে তোমাদের জন্য আবশ্যিক করে নাও।” [সুনান আত-তিরমিজীঃ ৩৫৪৮, হাসান, মিশকাতঃ ২৫৩৯ তা’লীকুর রাগীবঃ ২/২৭২।]

(৭) কোন এলাকাতে মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়লে সেই স্থান থেকে দূরে থাকাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন এলাকায় তোমরা মহামারী রোগের সংবাদ শ্রবণ করলে সেখানে প্রবেশ করবে না। আর কোন এলাকায় থাকা অবস্থায় যদি মহামারী শুরু হয়, তাহলে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।” [সহীহ বুখারীঃ ৫২৮৭, মুসলিমঃ ৪১১১।]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির কাছে উপস্থিত করা যাবে না।” [সহীহ বুখারীঃ ৫৩২৮, সহীহ মুসলিমঃ ৪১১৭।]

(৮) নেক আমল করা এবং মানুষের কল্যাণ সাধন করাঃ

আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নেক আমল অকল্যাণ, বালা-মুসীবত ও রোগ-ব্যাধি এবং আরো অনেক ধ্বংস হতে হেফাজত করে। দুনিয়ার নেককার মানুষেরা আখিরাতে নেককার মানুষ হবে।” [আল-হাকিম।]

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “যেই সমস্ত কারণে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যেকোন নেক আমল করা যেমন মানুষকে সাহায্য করা, আল্লাহর যিকির, কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দুয়া করা, নিজেকে আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে উপস্থাপন করা, তোওবা ও ইস্তিগফার। প্রচলিত ঔষধের চাইতে এই নেক আমলগুলো দ্বারা রোগ-ব্যাধি দূর হয় এবং অধিক শিফা লাভ হয়। কিন্তু এটা নির্ভর করে ব্যক্তি এই আমলগুলোর জন্য কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে, এই আমলগুলো এবং তার উপকারের প্রতি ব্যক্তির বিশ্বাস কতটুকু তার উপরে।”

(৯) ‘কিয়ামুল লাইল’ বা এশার নামাযের পর রাতের যেকোন সময়ে নফল নামায পড়াঃ

বিলাল রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কিয়ামুল লাইলের নামায আঁকড়ে ধর, নিশ্চয় তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকদের অভ্যাস। কারণ কিয়ামুল লাইল আল্লাহর নৈকট্য এনে দেয়, পাপ কাজ থেকে বাঁচার জন্য সুরক্ষা, মন্দ কাজের কাফফারা এবং শরীর থেকে রোগ দূরকারী।” [তিরমিযিঃ ৩৫৪৯ ও বায়হাক্বী। ইরাকী বলেছেন, এ হাদিসের সনদ হাসান, শায়খ আলবানী বলেছেন, হাদিসটি হাসান।]

(১০) খাবার ও পানির পাত্র সমূহ ঢেকে রাখাঃ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “তোমরা তোমাদের (খাবার) বাসন-পত্রগুলো ঢেকে রাখবে এবং ও পানির মশক (বর্তমানে যেমন জগ, কলসি সমূহের) মুখ বেঁধে রাখবে। কারণ বছরে এমন একটি রাত আছে, যে রাতে মহামারী রোগ অবতীর্ণ হয়। যে কোন খোলা পাত্র এবং বন্ধনহীন মশকের উপর দিয়ে তা অতিবাহিত হয়, তাতেই সেই মহামারী নেমে আসে।” [সহীহ মুসলিমঃ হাদীস একাডেমী নম্বর-৫১৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নম্বর-৫০৮৫।]

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “এটা এমন একটা বিষয় যা চিকিৎসকদের জ্ঞান বা বুদ্ধি দ্বারা অনুধাবন করা সম্ভব নয়।” [যাদুল মাআ’দ।]

সর্বশেষ, একজন মুসলিম বান্দার জন্য ওয়াজিব হচ্ছে, সে তার সমস্ত কাজ ও পরিণতির ব্যাপারে মহীয়ান, গরীয়ান আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখবে। যেহেতু সমস্ত কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা আল্লাহর হাতে, সুতরাং অত্যন্ত বিনীত অন্তর নিয়ে তাঁর কাছে কল্যাণ ও নিয়ামতের জন্য আশা করবে। যদি কখনো কোন বিপদ তাকে পেয়ে বসে, তাহলে সে ধৈর্য্য ধারণ করবে এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরষ্কার পাওয়ার আশা রাখবে। কেননা যেই ব্যক্তি ধৈর্য্য ধারণ করবে তার জন্য মহান আল্লাহ অনেক বড় পুরষ্কারের ওয়াদা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি ধৈর্যশীল লোকদেরকে তাদের (কাজের বিনিময়ে) পুরস্কার দেই বেহিসাব।” [সুরা যুমারঃ ১০।]

আ’য়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বললেন, “এটা হচ্ছে একটি আযাব। আল্লাহ তাআ’লা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের প্রতি ইচ্ছা করেন তাদের উপর তা প্রেরণ করেন। আর আল্লাহ তাআ’লা তাঁর মুমিন বান্দাদের উপর তা রহমত করে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি যখন প্লেগ রোগে আক্রান্ত জায়গায় সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করে এবং তার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে তাহলে সে একজন শহীদের সমান সওয়াব পাবে।” [সহীহ বুখারীঃ তাওহীদ প্রকাশনী নম্বর-৩৪৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নম্বর-৩২২৫।]

আমি আল্লাহর কাছে দুয়া করি, তিনি যেন আমাদেরকে নেক আমল করা এবং এমন কথা যা তাঁকে সন্তুষ্ট করে, তা বলার জন্য তোওফিক দান করেন। কেননা, একমাত্র তিনিই বলেন সঠিক কথা ও তিনিই দেখান সঠিক পথ।
সমাপ্ত

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!

Post a Comment

0 Comments