অনেকেই বলছেন চীন, ইটালি, আমেরিকায় আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছে, আর এর কারন হচ্ছে তারা ইসলামের অমঙ্গল চায়, যুগ যুগ ধরে ইসলামের ক্ষতি সাধন করে আসছে। তাহলে এই গজব তো এখন আমাদের বাংলাদেশেও এসেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্পাক আমাদের মুসলমানদের উপরও নারাজ!
কিন্তু কেনো?
এর উত্তর হচ্ছে, অমুসলিম চীনারা শুকর, কুকুর, টিকটিকি, বাদুড় ও এমন অনেক কিছুই খায় যেটা ১০০% হারাম। আর আমরা মুসলিম হয়ে সুদ-ঘুষ-মদ খাই, অন্যের হক নষ্ট করে, দূর্নীতি করে খাই, এগুলো কি শতভাগ হারাম নয়?
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান (১), যাতে তারা ফিরে আসে (২) [সুরা রূম, আয়াত : ৪১]
Corruption has appeared in the land and the sea on account of what the hands of men have wrought, that He may make them taste a part of that which they have done, so that they may return.
তাফসীর
[১] অর্থাৎ স্থলে, জলে তথা সারা বিশ্বে মানুষের কুকর্মের বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। ‘বিপর্যয়’ বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনাবলীর প্রাচুর্য, সব কিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কম এবং ক্ষতি বেশী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি আপদ-বিপদ বোঝানো হয়েছে। [সাদী, কুরতুবী, বাগভী] অন্য এক আয়াতে এই বিষয়বস্তু এভাবে বর্ণিত হয়েছে, “তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। অনেক গোনাহ তো আল্লাহ ক্ষমাই করে দেন।” [সূরা আশ-শূরা: ৩০] উদ্দেশ্য এই যে, এই দুনিয়ায় বিপদাপদের সত্যিকার কারণ তোমাদের গোনাহ; যদিও দুনিয়াতে এসব গোনাহের পুরোপুরি প্রতিফল দেয়া হয় না এবং প্রত্যেক গোনাহর কারণেই বিপদ আসে না। বরং অনেক গোনাহ, তো ক্ষমা করে দেয়া হয়। তবে এটা সত্য যে, সমস্ত গোনাহর কারণে বিপদ আসে না বরং কোন কোন গোনাহর কারণেই বিপদ আসে। দুনিয়াতে প্রত্যেক গোনাহর কারণে বিপদ আসলে একটি মানুষও পৃথিবীতে বেঁচে থাকত না। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের সীমালংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।” [সূরা আন-নাহল: ৬১] আল্লাহ আরো বলেন, রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।” [সূরা ফাতির: ৪৫] বরং অনেক গোনাহ তো আল্লাহ মাফই করে দেন। যেগুলো মাফ করেন না, সেগুলোরও পুরোপুরি শাস্তি দুনিয়াতে দেন না; বরং সামান্য স্বাদ আস্বাদন করান।
[২] কাতাদাহ বলেন, এটা আল্লাহ কর্তৃক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসেবে পাঠানোর আগের অবস্থার বর্ণনা। যখন যমীন ভ্ৰষ্টতা ও অন্ধকারে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তারপর আল্লাহ যখন তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠালেন, তখন মানুষের মধ্যে যারা ফিরে আসার তারা ফিরে আসল। [তাবারী]
আমরা নিজেকে মুসলিম ভেবে গর্ব করি ঠিকই কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে কয়জনের মাঝে মুসলিমদের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান?
আমরা মুসলিমরা শেষ রমজানকে চাঁদরাত হিসেবে ধুমধাম নাচগানে আনন্দের মাধ্যমে পালন করি ঠিকই, কিন্তু আমাদের মধ্যে কয়জন এমন মুসলিম আছেন, যারা শেষ রমজানকে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বিদায় দেই এই আশঙ্কায় যে সামনের রমজানটা ভাগ্যে জুটবে তো?
আমাদের দেশের মুসলিমরা নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয়ার চেয়ে বরং একজন বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাই তো পহেলা বৈশাখের ফজরের ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠি ঠিকই কিন্তু ফজরের নামাজ আদায় করে এক আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্যে নয় বরং প্রভাত ফেরীর মঙ্গলশোভা যাত্রায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে মঙ্গল প্রার্থনা করতে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যখন কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার ঘটে তখন তাদের মাঝে মহামারি এবং এমন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যার নমুনা তারা পূর্বপুরুষদের মাঝে দেখেনি।" (ইবনে মাজাহ্: ৪০১৯)
আমরা মুসলিমরা আজ অশ্লীলতাকে বানিয়েছি আধুনিকতা, ব্যাভিচারকে বানিয়েছি সামাজিকতা। এই মহামারী তাই যেখানে আমাদের নিজের হাতের কামাই, আমরা অন্যকে নিয়ে ঢোল পিটাই!
সমাপ্ত
লেখাঃ সোহানা আক্তার (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!
0 Comments