যখন বিক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝা বায়ুতে সমুদ্র উত্তাল-তরঙ্গায়িত থাকে, তখন নৌকার আরোহীগণ আর্তনাদ করে বলে, 'হে আল্লাহ্!'
যখন মরুভূমিতে উট চালক ও কাফেলা পথ হারিয়ে ফেলে তখন তারা আর্তচিৎকার করে বলে, 'হে আল্লাহ্!'
যখন বিপর্যয় ও দুর্যোগ দেখা দেয় তখন দুর্দশাগ্রস্তরা বলে উঠে, 'হে আল্লাহ্!'
দরজা দিয়ে যখন কেউ প্রবেশ করতে চায় আর তার সামনেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং অভাবীদের সামনে যখন বাধার প্রাচীর নির্মাণ করা হয় তখন তারা চিৎকার দিয়ে বলে, 'হে আল্লাহ্!'
যখন সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, সকল আশা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং পথ সংকীর্ণ হয়ে যায় তখন ডাক পড়ে, 'হে আল্লাহ্!'
বিশাল, বিস্তীর্ণ ও প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী যখন আপনার কাছে সংকীর্ণ মনে হয়, নিজেকে সংকুচিত ভাবতে পরিস্থিতি বাধ্য করে তখন আপনি বলুন, 'হে আল্লাহ্!'
আর এই ডাক কেবল আল্লাহর জন্যই শোভা পায় এবং এই ডাকের সারা দেওয়ার ক্ষমতা তিনিই একমাত্র রাখেন। গভীর রজনীতে সারা দুনিয়ার মানুষ যখন ঘুমে আচ্ছন্ন সেই সময় ক্ষুধার জ্বালায় সমুদ্রের গহীন তলদেশে শৈবালে গায়ে লেগে থাকা ছোট ছোট কীটপতঙ্গ গুলো চিৎকার দিয়ে বলে, 'হে আল্লাহ! এই ডাক দুনিয়ার কেউ শুনতে পায় না, কিন্তু আরশের মালিক আল্লাহ রব্বুল ইজাজত ওয়া জালাল তার ডাকে সারা দিয়ে সাথে সাথে খাবারের ব্যবস্থা করেন'। (সুবহানআল্লাহ)
يَسْأَلُهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
আসমানসমূহ ও যমীনে যারা আছে সবাই তাঁর কাছে প্ৰাথী (১), তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে রত (২)। (সূরাহ আর রহমান, আয়াত : ২৯)
All those who are in the heavens and the earth ask of Him; every moment He is in a state (of glory).
তাফসীর
[১] অৰ্থাৎ আসমান ও যমীনের সমস্ত সৃষ্টবস্তু আল্লাহ তা’আলার মুখাপেক্ষী এবং তাঁর কাছেই প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য প্রার্থনা করে। যমীনের অধিবাসীরা তাদের রিযিক, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা সুখ-শান্তি, আখেরাতে ক্ষমা, রহমত ও জান্নাত প্রার্থনা করে এবং আসমানের অধিবাসীরা যদিও পানাহার করে না; কিন্তু তারাও আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ ও কৃপার মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা’আলার কাছে তাদের এই প্রার্থনা প্রতিনিয়তই অব্যাহত থাকে। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী; ইবন কাসীর]
[২] অর্থাৎ মহাবিশ্বের এ কর্মক্ষেত্রে প্রতি মুহুর্তে তাঁরই কর্মতৎপরতার এক সীমাহীন ধারাবাহিকতা চলছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তার কাজের মধ্যে আছে কারও গোনাহ ক্ষমা করা, কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা, কারো উত্থান ঘটানো আবার কারো পতন ঘটানো।” [ইবনে মাজাহঃ ২০২]
এটি একটি উদাহরণ, মূলত তিনি প্রতিদিন কাউকে আরোগ্য দান করছেন আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করছেন। কোন ব্যথিত ও ক্ৰন্দনকারীর মুখে হাসি ফুটান, কোন প্রার্থনাকারীকে প্রার্থিত বস্তু দান করেন। সীমা সংখ্যাহীন সৃষ্টিকে নানাভাবে রিযিক দান করছেন। অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন স্টাইল, আকার-আকৃতি ও গুণ-বৈশিষ্ট দিয়ে সৃষ্টি করছেন। তাঁর পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। তাঁর পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহুর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে এবং তার স্রষ্টা তাকে প্রতিবারই একটি নতুন রূপে সজ্জিত করেন যা পূর্বের সব আকার-আকৃতি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। মোটকথা, প্রতিমুহূর্তে, প্রতি পলে আল্লাহ তা’আলার একটি বিশেষ শান থাকে। এটাকে বলা হয় আল্লাহর প্রাত্যহিক তাকদীর। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী; তাবারী]
وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ
আর তোমাদের কাছে যে সব নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহ্রই কাছ থেকে; তারপর যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে ডাক (সূরাহ নাহল, আয়াত : ৫৩)
And whatever favor is (bestowed) on you it is from Allah; then when evil afflicts you, to Him do you cry for aid.
হে আল্লাহ্! ঈমানের শীতলতা দ্বারা আমাদের হৃদয়ের জ্বালা নিবারণ করুন। আমীন।
সমাপ্ত
মূল: 'লা-তাহজান' - হতাশ হবেন না...
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!
0 Comments