প্রশ্ন: মনের পশুত্ব কীভাবে সহজে ধ্বংস করা যায়?
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَـٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ
“আর আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে কিন্তু তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, কিন্তু তা দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে কিন্তু তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট। তারাই হল গাফেল (শৈথিল্য পরায়ণ)।” (সূরা আ’রাফ, ১৭৯)
জনৈক মনিষী বলেন, "আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বিবেক দিয়েছেন; কু-প্রবৃত্তি দেননি। পশুদেরকে কু-প্রবৃত্তি দিয়েছেন; বিবেক দেননি। আর মানুষকে কু প্রবৃত্তি ও বিবেক উভয়টি দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের বিবেক যখন তার কু-প্রবৃত্তির উপর প্রাধান্য পায়, তখন সে ফেরেশতাদের ঊর্ধ্বে চলে যায়। আর যখন তার কু-প্রবৃত্তি বিবেকের উপর প্রাধান্য পায়, তখন সে জন্তু-জানোয়ারে নিম্নস্তরে নেমে যায়।"
যাহোক, মানুষের মধ্যে নানা ধরণের পশুত্বের স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। যেমন: হিংস্রতা, নির্মমতা, বদমেজাজি, অন্যের অধিকার হরণ, হালাল-হারামের তওয়াক্কা না করা, যৌন চাহিদা পূরণে নীতি-নৈতিকতার পরোয়া না করা, নির্লজ্জতা, অত্যাচার-নিপীড়ন করা ইত্যাদি। এগুলো হল পশুত্বের স্বভাব।
নিম্নে নিকৃষ্ট পশু সুলভ চরিত্র ও আচার-আচরণ থেকে মুক্ত হওয়ার ১২টি করণীয় ও দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হল:
❖ ১) অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি জাগ্রত করা এবং বিবেক দিয়ে ন্যায়-অন্যায় ও সঠিক-বেঠিক পার্থক্য করা। সত্যিকার অর্থে যার মধ্যে বিবেক ও মানবিক মূল্যবোধ আছে সে একটু চিন্তা করলেই ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারে। এটা আল্লাহ প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য যা তিনি মানুষের মধ্যে দান করেছেন।
❖ ২) ইসলামের জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করা। দুআ, তাসবিহ ও আজকার সমূহ পাঠে অভ্যস্ত হওয়া। বিশেষ করে জামাআতে সালাত আদায়ে যত্নশীল হওয়া। আল্লাহর ইবাদত গুজার বান্দার মধ্যে মানবিক গুণাবলি বিকশিত হয়, সে অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন থাকে এবং কখনো কারোও প্রতি অবিচার করতে পারে না।
❖ ৩) ইসলামের দৃষ্টিতে উন্নত স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা এবং সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটানো।
❖ ৪) শয়তানের পক্ষ থেকে মনের মধ্যে সৃষ্ট কুমন্ত্রণা বশত: পশুত্বের মনোভাব, পাপাচার ও অন্যায় অপকর্ম করার কু বাসনা জাগ্রত হলে সাথে সাথে 'আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম' (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করা এবং খারাপ চিন্তাভাবনা থেকে মনকে ফিরিয়ে আনা।
❖ ৫) নিয়মিত তরজমা-তাফসির সহ কুরআন পড়া ও হাদিস স্টাডি করা এবং অথেনটিক সোর্স থেকে ইসলাম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা। কারণ জ্ঞান হল আলো। যার কাছে জ্ঞানের আলো থাকে সে নিজের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দেখতে পায়, খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং উন্নত চরিত্র এবং মানবিক গুণাবলী বিকশিত করতে সক্ষম হয়।
❖ ৬) আল্লাহ ওয়ালা, তাকওয়া বান ও আমলদার আলেমদের উপদেশ মূলক বক্তব্য শোনা। কেননা উপদেশ দ্বারা মুমিন উপকৃত হয়।
❖ ৭) ভালো লোকদের সংস্রবে থাকা এবং খারাপ ও পশু সুলভ আচরণে অভ্যস্ত লোকদের সাথে বন্ধুত্ব না করা। কেননা কথায় আছে, "সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”
❖ ৮) আত্ম সমালোচনার মাধ্যমে নিজের মধ্যে পশু সুলভ আচরণ, খারাপ স্বভাব ও দোষ-ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করা।
❖ ৯) মহান আল্লাহর কাছে খারাপ চরিত্র, পশু সুলভ আচরণ ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য এবং উন্নত ও সুন্দর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার জন্য দুআ করা।
❖ ১০) এতিমদের মাথায় হাত বুলানো এবং তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব নেয়া। এতিমদের মাথায় হাত বুলালে বা তাদের প্রতি যত্ন নিলে অন্তরে নম্রতা সৃষ্টি হয় এবং নিজের মধ্যে দয়া, মমতা, পরোপকার ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী জাগ্রত হয়।
❖ ১১) বিপদগ্রস্ত ও কঠিন রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে দেখতে যাওয়া। এটি মানুষের মধ্যে নিজের ব্যাপারে নতুন উপলব্ধি সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
❖ ১২) জানাজায় অংশ গ্রহণ ও কবর জিয়ারত করা। এতে নিজের মৃত্যু, শেষ পরিণতি, কবরের শাস্তি, আখিরাতের ভয়াবহতা, জাহান্নামের আগুন ইত্যাদি স্মরণ হয় এবং হৃদয়ে নিজেকে সংশোধনের আত্মোপলব্ধি সৃষ্টি হয়।
এ সব প্রচেষ্টার মাধ্যমে সর্ব প্রকার খারাপ ও পশু সুলভ চরিত্র বিদূরিত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম
লেখাঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!
1 Comments
Khub valo laglo...
ReplyDelete